ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: মোঃ আরিফুল ইসলাম মুরাদ,
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করে গৃহবধূ মৌ (২৫) কে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী সাজমুল হোসাইনের (৩৫) বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার বাহাম গ্রামে এই মর্মান্তিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে আহত গৃহবধূকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ভুক্তভোগী মৌয়ের মা বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে সাজমুলসহ তার দেবর, ননদ, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ মোট ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে পারিবারিকভাবে মৌ ও সাজমুলের বিয়ে হয়। সাজমুল দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বিয়ের পর থেকেই ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য মৌয়ের ওপর চাপ দেওয়া হতো। দরিদ্র বাবা-মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা এনে দেওয়ার পরও নির্যাতন থেমে থাকেনি।
জীবিকা নির্বাহে বাধ্য হয়ে মৌ ঢাকায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে একই কারখানায় কাজ শুরু করেন। নিজের উপার্জনের সমস্ত অর্থ স্বামীর হাতে তুলে দেওয়ার পরও তাকে নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অন্যদিকে, স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
গত মঙ্গলবার, যৌতুকের জন্য চাপ দিলে মৌ তাতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর সাজমুল ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে মৌকে বেধড়ক পেটায়। মারধরের কারণে মৌয়ের নাক-মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহত গৃহবধূ মৌ বলেন, “আমি বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিয়েছি, নিজের আয়ও তাকে দিয়েছি। তারপরও যৌতুকের জন্য আমাকে মারধর করা হতো। তিন মাস বয়সী সন্তানের জন্য কাজে যেতে পারছি না বললে আমাকে আরও বেশি নির্যাতন করা হয়। মঙ্গলবার আমাকে সবাই মিলে এমনভাবে পিটিয়েছে যে আমার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত সাজমুল হোসাইন তার স্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “মৌ নিজেই নিজের নাকে-মুখে আঘাত করে আহত হয়েছে। আমি তাকে কোনোভাবেই মারধর করিনি বা যৌতুক চাইনি।”
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, “ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করতে একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
গৃহবধূ মৌয়ের এই মর্মান্তিক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
Leave a Reply