1. mh01610093622@gmail.com : dainikdakshineroporadh :
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:

গভীর সমুদ্র বন্দর: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নাকি ব্যর্থ পরিকল্পনার বলি?

  • আপডেটের সময় : রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৫
  • ২৪ বার ভিউ

Engr. Md Al Amin Chowdhury

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো সমুদ্রবন্দর। কিন্তু বর্তমানে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আন্তর্জাতিক মানের বিশাল কার্গো জাহাজ পরিচালনায় সক্ষম নয়। এর ফলে, ব্যবসায়ীদের বাড়তি সময় ও খরচ বহন করতে হচ্ছে, যা সরাসরি ভোক্তার ওপর প্রভাব ফেলছে।

সমস্যার শেকড়: গভীর সমুদ্র বন্দরের অনুপস্থিতি

বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী চ্যানেলের গভীরতা বড় কার্গো জাহাজের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে, আউটার অ্যাংকরেজে (বহিঃনোঙ্গর) পণ্য খালাস করতে হয় লাইটার জাহাজের মাধ্যমে, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। উদাহরণস্বরূপ, চীনের একটি বন্দর থেকে একটি বিশাল কার্গো জাহাজ মাত্র ২৭-২৮ ঘণ্টায় পণ্য লোডিং সম্পন্ন করলেও চট্টগ্রামে সেটি আনলোড করতে ২৬ দিন লেগে যায়! এত দীর্ঘ সময় লাগার মূল কারণ বন্দরের সীমাবদ্ধ ক্যাপাসিটি।

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন জাহাজের ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ প্রায় ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া, লাইটার ভেসেল ব্যবহারের খরচ যোগ করলে আমদানি পণ্যের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যায়। একারণে, বন্দরের গুদাম ছাড়ার আগেই ৩০ টাকার পণ্য ৪০ টাকায় পরিণত হয়।

গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয়তা

গভীর সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে সরাসরি বড় কার্গো জাহাজ ভিড়তে পারলে:

আমদানি-রপ্তানির সময় ৬০-৭০% পর্যন্ত কমে যাবে।

লজিস্টিক ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

আন্তর্জাতিক মানের বৃহৎ কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প আলোচনায় আসে এবং চীন এতে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই প্রকল্প বাতিল করা হয়।

পরিবর্তে, পায়রা বন্দর নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়, যা আন্তর্জাতিক মানের গভীর সমুদ্র বন্দর নয়, বরং একটি নদীবন্দর। তাছাড়া, বিশ্লেষকদের মতে, যেখানে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেখানে শুধুমাত্র পায়রা বন্দরের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অথচ, এই বন্দরে এখন পর্যন্ত একটিও আন্তর্জাতিক মানের বড় জাহাজ ভিড়েনি।

অর্থনৈতিক ক্ষতি ও করদাতাদের বোঝা

এই ধরনের ব্যর্থ পরিকল্পনার ফলে:

আমদানি ব্যয় বাড়ছে, যা সরাসরি সাধারণ জনগণের ওপর চাপ তৈরি করছে।

দেশের ঋণের পরিমাণ অপ্রয়োজনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

করদাতাদের অর্থ অপচয় হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।

সমাধান কী?

গভীর সমুদ্র বন্দরের বিকল্প নেই।

সোনাদিয়া বা অন্য কোনো উপযুক্ত স্থানে আন্তর্জাতিক মানের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ জরুরি।

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।

পরিকল্পিত বিনিয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্যের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও টেকসই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ শুধু আমদানি খরচ কমাতে পারবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। এখন সময় পরিকল্পিত ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি
Desing & Developed BY ThemeNeed.com