বিজয় চৌধুরী
একসময় বাজারে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছিল ‘মোজো’। ক্রেতার পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া তো দূরের কথা, দোকানিদের কাছেও ছিল একটি অবজ্ঞার নাম। অথচ সময়ের পালাবদলে সেই মোজোই এখন আলোচনার শীর্ষে। কারণ—মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ৬০ টাকা থেকে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকা!
এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কি যুক্তি আছে? স্বাদ বা মানে কি এসেছে বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন? ভোক্তারা বলছেন—না, কিছুই আসেনি। কিন্তু দাম বেড়েছে একাধিক ধাপে, প্রায় নিঃশব্দে।
তবে পরিবর্তন এসেছে কৌশলে—বিশ্বজুড়ে যখন পশ্চিমা পণ্য বর্জনের ডাক উঠেছে, তখন দেশীয় পণ্যের প্রতি মানুষের আবেগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্র্যান্ডিং নতুনভাবে সাজিয়েছে মোজো। বোতলের গায়ে বাংলাদেশের পতাকা, বিজ্ঞাপনে দেশপ্রেমের আহ্বান—সব মিলিয়ে এক ধরনের ‘আবেগ নির্ভর বিপণন’ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি এক ধরনের ‘ইমোশনাল মার্কেটিং’ যার পেছনে মূল লক্ষ্য—বিক্রি বাড়ানো।
তবে প্রশ্ন উঠেছে—স্বাদ ও মানের তুলনায় এই দাম কতটা যৌক্তিক? পণ্যের মান যখন উন্নত হয়নি, কাঁচামাল স্থানীয়, উৎপাদন দেশেই—তখন দাম বেড়ে যাওয়া ভোক্তাদের কাছেও ধাক্কা হয়ে এসেছে।
ভোক্তাদের অভিমত:
মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক তরুণ বলেন, “পাশের দোকানে মোজোর দাম শুনে তো চোখ কপালে উঠেছে। যেটা আগে ৬০ টাকায় খেতাম, সেটা এখন ১১০ টাকা! অথচ স্বাদ তো আগের মতোই। শুধু বোতলের গায়ে পতাকা লাগিয়ে কী লাভ?”
তৃষ্ণা মেটানোর আরও স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী বিকল্পের কথাও বলছেন অনেকে। বিশুদ্ধ পানি, লেবু-পানি কিংবা মাত্র ৬ টাকার স্যালাইন—সবই হতে পারে শরীরের জন্য ভালো ও নিরাপদ।
বিশেষজ্ঞদের মত:
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা হক বলেন, “অতিরিক্ত চিনিযুক্ত কোল্ড ড্রিংকস শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তার চেয়ে বিশুদ্ধ পানি, লেবু পানি বা ওআরএস জাতীয় পানীয় অনেক বেশি উপকারী।”
দেশি পণ্যকে ভালোবাসা দরকার, উৎসাহ দেওয়া দরকার—তাতে কোনো দ্বিধা নেই। কিন্তু সেই ভালোবাসা যেন চোখ বন্ধ করে নয়। ‘দেশপ্রেম’ যদি ব্যবসার ঢাল হয়ে দাঁড়ায়, আর ক্রেতাদের পকেটের প্রতি সম্মান না দেখানো হয়, তাহলে সেখানে প্রশ্ন তোলাই সচেতনতার পরিচয়।
তাই, পণ্যের গায়ে পতাকা থাকলেই সেটা ‘দেশপ্রেম’ হয়ে ওঠে না—ভালো মান, ন্যায্য দাম আর সম্মানজনক আচরণই প্রকৃত দেশীয় গৌরব।
Leave a Reply