নিজস্ব প্রতিনিধি: মাওলানা সোহেল
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক মর্মান্তিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ৭ জানুয়ারি ২০২৫, রাত ৭টার দিকে প্রবাসী মামুনের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
তাসলিমা বেগম (২১), পিতা মৃত আবু তাহের ও মাতা আমেনা বেগমের কন্যা, লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ফরাজির দোকান এলাকার বাসিন্দা। ২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুসলিম শরিয়াহ মোতাবেক তিন লক্ষ টাকা দেনমোহরে তার বিয়ে হয় শশীভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের মামুনের সঙ্গে।
বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ১০ আনা স্বর্ণের গলার চেইন, ৭০ হাজার টাকার পোশাক এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বিয়ের এক মাস পর থেকেই নতুন করে যৌতুকের দাবি ওঠে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন একটি মোটরসাইকেল দাবি করলে তাসলিমার পরিবার ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে সেটি কিনে দেয়।
এরপর মামুনকে বিদেশ পাঠানোর জন্য শ্বশুর-শাশুড়ির পক্ষ থেকে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরিবারের চাপের মুখে তাসলিমা বাবার বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা এনে দেন। এরপর তিনি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামী মামুন বিদেশে চলে যান।
স্বামী বিদেশ যাওয়ার দুই মাস পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঘর তৈরির জন্য তাসলিমার কাছে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। একপর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাসলিমা শশীভূষণ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপে অভিযোগটি ধামাচাপা পড়ে যায়। এরপরই শুরু হয় আরও ভয়াবহ অত্যাচার। স্বামীর অনুপস্থিতিতে দেবর মমিন ও তামিমের লোলুপ দৃষ্টির শিকার হন তাসলিমা। তিনি বিষয়টি শাশুড়িকে জানালে উল্টো পরিবারের সবাই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
৭ জানুয়ারি ২০২৫, রাত সাড়ে ৭টায় পরিকল্পিতভাবে শ্বশুর আব্দুর রব, শাশুড়ি জাহানারা বেগম, ননদ নাসিমা ও দেবর মমিন-তামিম মিলে তাসলিমার শরীরে লোহার রড গরম করে ছ্যাঁকা দেয়। তীব্র যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে মৃত ভেবে ঘরে ফেলে রেখে যায়।
কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে পেলে তাসলিমা মায়ের কাছে ফোন করে ঘটনা জানায়। সঙ্গে সঙ্গে আমেনা বেগম পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে চরফ্যাশন হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসক না থাকায় রাত ১টা ৩০ মিনিটে লালমোহন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরদিন ভোলা জেলা আদালতে মামলা করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো আসামিরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়িয়ে তাসলিমার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।
নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা তাসলিমা বেগম সরকারের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন। তিনি গণমাধ্যম ও প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে দোষীরা আইনের আওতায় আসে এবং তিনি ও তার সন্তান নিরাপদে থাকতে পারেন।
Leave a Reply