সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সংকট ও বিভক্তির এক চরম পর্যায়ে অবস্থান করছে। গত ১৮ বছরে দলের নেতাকর্মীরা নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হলেও, রাজনৈতিক কৌশলের অভাবে ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট ও ‘সিন্ডিকেট তত্ত্ব’
বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর অভিযোগ, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে দলকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের মতে, এই চক্রই দেশজুড়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
একজন গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বন্দী জীবন কাটানো এক ব্যক্তি জানান, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া সব ধরনের অপকর্ম বন্ধ করার চেষ্টা করলেও, দলীয় অভ্যন্তরে একশ্রেণির সুবিধাভোগী নেতাকর্মী তা হতে দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে দল থেকে অনেক অপরাধীর বহিষ্কার করা হয়েছে, তবে কেবল বহিষ্কার নয়, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
২০০১-২০০৬ ও বর্তমান বাস্তবতা
২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন কয়েকজন নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল। এরপর ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পায়, যা বিএনপির জন্য বড় ধাক্কা ছিল।
এরপর থেকে টানা ১৬ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপি সরকার পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির সমর্থকদের বিশ্বাস ছিল, দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের পর দল অনেক কিছু শিখবে এবং শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে পরিচালিত হবে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন বলছে।
‘সঠিক পথে নেই বিএনপি’ – জনমতের পরিবর্তন
বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে সমর্থন করলেও, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ দলটির প্রতি আস্থা হারিয়েছে। এর প্রধান কারণ দলের ভেতরের অরাজকতা, অসংগঠিত নীতিমালা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “যে সরকারকে বিএনপি অবৈধ বলছে, সেই সরকারই কীভাবে বিএনপির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নষ্ট করার দায়িত্ব দিয়ে গেল?”
‘ভারতের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ’
বিএনপির কিছু অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা ভারতের সঙ্গে সমঝোতা করে চলতে চাইছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই কৌশল বিএনপির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।
একজন গণমাধ্যমকর্মীর মতে, “হাসিনার পতন না হলে বাংলাদেশে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাছাড়া, সরকার ক্ষমতায় থাকলে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ফাঁসি দেওয়া হতে পারে বা সারাজীবন কারাবন্দি রাখা হতে পারে।”
বিএনপির সামনে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
১. অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা – সিন্ডিকেট ও অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
2. সঠিক কৌশল নির্ধারণ – জনসাধারণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে।
3. ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা – ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে দলকে সতর্ক হতে হবে।
4. আন্দোলনের কার্যকারিতা বাড়ানো – জনমত তৈরি করতে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী আন্দোলনের প্রয়োজন।
বিএনপির জন্য সামনে পথ কঠিন হলেও, যদি তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে—এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Leave a Reply