ফাহিম হোসেন রিজু
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
সাল টা ১৯৯৮ প্রতিষ্ঠিত হয় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রাণীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সেই সময় ওই বিদ্যালয়ে সভাপতি ছিলেন মো.সোনা মিয়া। ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন সৈয়দ আখতারুজ্জামান। সেই ১৯৯৮ সালে চাকরির আশ্বাস দিয়ে ছিলেন প্রধান শিক্ষক, আব্দুল হান্নান মন্ডল লিটনকে। এই আশ্বাস নিয়ে ওই বিদ্যালয়ে কাজ করেছিলেন আব্দুল হান্নান মন্ডল লিটন ২০২২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তাকে কোনো বেতন দেওয়া হয়নি। ওই যে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক চাকরি দেবে। এই চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক হাতিয়ে নেয় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। এবং ৫ শতাংশ জমি, সেই জমির এখনকার বাজারে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। এখন আব্দুল হান্নান মন্ডলের জীবন চলে পাগলের মতো।
প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামান উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ানের সাতপাড়া গ্রামের সৈয়দ আনসার ফকিরের ছেলে। ও আব্দুল হান্নান মন্ডল লিটন উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ানের কশিগাড়ী গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।
শুধুমাত্র এটি নয় আবার কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে। ওই বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে প্রধান শিক্ষকের ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগও পাওয়া যায়। শুরু করা করা যাক
ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক থাকা পরেও ঐ পদে আবার নিয়োগ এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও অজ্ঞাত কারণে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় অভিযোগকারী ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামান ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোপনে অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্ন কর্মী নিশ্য প্রহরী নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন।
নিয়োগের নীতিমালায় জাতীয় বহুল প্রচারিত পত্রিকা ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নীতিমালা থাকলেও তিনি জেলার সরকারি ডিএফপি তালিকাভুক্ত পত্রিকা থাকলেও তা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পাশ্ববর্তী জেলার অপ্রচলিত সার্কুলেশন বিহীন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিয়ে গোপন রেখেছেন। তার কাছে এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণসহ একাধিক ব্যক্তি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি তা সে সময় অস্বীকার করেছেন।
পরবর্তীতে দেখা যায় গত ২৩/৮/২০২৪ ইং তারিখে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের ছুটি থাকলেও ওই দিন গোপনে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামান নিয়োগ বোর্ডের সকলকে ম্যানেজ করে নিয়োগ পরীক্ষা সমাপ্ত করেন এবং মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেন। প্রধান শিক্ষক এলাকার প্রচলিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিলে স্থানীয় যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতো, কিন্তু সার্কুলার সম্পর্কে জানতে না পারায় অনেক যোগ্য প্রার্থী আবেদন করতে পারেনি বলে জানায় স্থানীয়রা।
এদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি পদে জনবল নেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও সম্প্রতি সরেজমিনে রাণীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গেলে চোখে পড়ে বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ অবস্থা। শিক্ষার পরিবেশ নেই বললেই চলে, শ্রেণিকক্ষের জানালা-দরজা ভাঙ্গা-চোরা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় দেখে মনে হবে যেনো শিক্ষক আর কর্মচারী নিয়োগই ছিলো যেন প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য।
এ বিষয়ে স্কুলের জমিদাতা ফাতেমা চৌধুরী সাথে কথা হলে তিনি আক্ষেপ করে জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামান কৌশলে আওয়ামীলীগকে সভাপতি করে একাই মোটা অংকের বিনিময়ে স্কুলের নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা কেউই জানেন না কিভাবে রাতারাতি তিনজন নিয়োগ পেলো? প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করতে এবং বিদ্যালয়ের সকল কাজে একক কর্তৃত্ব খাটাতে সুকৌশলে, নিজের অনুসারী ব্যক্তিদেরকে সদস্য করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। সম্প্রতি তিনি অনিয়ম করে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন-যা নিয়োগ পাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আমরা স্থানীয়রা কেউ জানতাম না, হঠাৎ করে দেখি তিনজন ব্যক্তি বিদ্যালয়ে কাজ করছেন। আমরা এই অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে যোগ্যতার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের দাবি জানাই।
ওই স্কুলের অফিস সহায়ক থেকে শুনেছি বিদ্যালয়ে ৩জনকে নতুন নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। শুধু দেখি নতুন করে তিনজন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছে। বিদ্যালয়ের নাম না প্রকাশে শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা এই বিদ্যালয়ে আছি। ২০২৪ সালেও প্রধান শিক্ষক গোপনে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এবারও স্কুলের কাউকে না জানিয়ে একা একাই গোপনে বিদ্যালয়ে ৩জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেন-এসবের আমরা কিছুই জানিনা। বিদ্যালয়টি অনিয়ম আর দূর্ণীতির আখাড়ায় পরিণত করেছেন তিনি।
অফিস সহায়ক পদ বহাল থাকা অবস্থায় প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামান মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করে অবৈধ ভাবে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ৩ কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে টাকার বিনেময় আওয়ামীলীগ পন্থিকে অবৈধ ভাবে কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। মহামান্য হাইকোটের রিট পিটিশনের আদেশে স্কুল টি এমপিও ভুক্তির আদেশ ৭ জন এমপিওর আদেশ দিলে হাইকোটের আদেশে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামান কৃষি পদে ১৩/০২/২০০৫ ইং সালে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে থাকে ।
২০১৮ ইং সালে এমপিও করার সময় নতুন করে কাগজ দেখানো হয়েছে প্রধান শিক্ষক পদে ২০/০৮/২০২১ ইং সাল। প্রধান শিক্ষক হতে হলে কমপক্ষে ১০ বছর অভিগতা থাকতে হয়। সেখানে প্রধান শিক্ষক কি ভাবে হয় তা জানতে চায় এলাকা বাসী কর্মচারী নিয়োগ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।
অদৃশ্য ইশারায় অভিযোগের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে-আমরা এর সুষ্ঠ সমাধানসহ অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও প্রধান শিক্ষকের বিচারের দাবি জানাই। এদিকে অতি সত্বর এ নিয়োগ বাতিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা।
এই সংবাদ প্রকাশের জেরে উপজেলার প্রতিনিধি জাতীয় দৈনিক বাংলা প্রতিদিন পত্রিকার সাংবাদিক আতিক হাসান সুমন ও ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রতিনিধি দৈনিক তীতৃয় মাত্রা পত্রিকার সাংবাদিক ফাহিম হোসেন রিজু এবং ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রতিনিধি সাপ্তাহিক জয় ভিশন পত্রিকার সাংবাদিক মোফাজ্জল হোসেন সহ ৩জনকে হুমকি দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক।
গত শনিবার (০৮ মার্চ) রাত ৯টার দিকে উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজার এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় হুমকির কথা বলে। এ ঘটনায় ওই রাতে ঘোড়াঘাট প্রেসক্লাবের সকল সদস্য বৃন্দ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ প্রকাশ করেন।
অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের নাম সৈয়দ আখতারুজ্জামান।
তিনি উপজেলার রাণীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ানের সাতপাড়া গ্রামের সৈয়দ আনসার ফকিরের ছেলে।
জানা যায়, গত ৫ মার্চ ঘোড়াঘাট উপজেলার রাণীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিক বাংলা প্রতিদিন পত্রিকায় ও দৈনিক তীতৃয় মাত্রা পত্রিকায় এবং সাপ্তাহিক জয় ভিশন পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর জের ধরে গত ৮ই মার্চ রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক আতিক হাসান সুমন ও ফাহিম হোসেন রিজু এবং মোফাজ্জল হোসেনকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
অপর দিকে ওই বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী লাবলি বেগমের স্বামী জয়নাল আবেদিন সাংবাদিক আজহারুল ইসলাম সাথীর নামে থানায় অভিযোগ করেন এবং মারার হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জয়নাল আবেদিন উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ানের নুরপুর গ্রামের আসান আলীর ছেলে।
শুধু তাই নয়, ফরহাদ কবির নামে একজন ব্যাক্তি ওই নিউজ প্রকাশের জেরে জাতীয় দৈনিক বাংলা প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক কে কল করে অকেজো ভাষায় গালি-গালাজ করে ও হুমকি দেন যার সম্পূর্ণ কল রেকর্ড ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরহাদ কবির নামে ওই ব্যাক্তি, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আখতারুজ্জামানের
দোসর।
এ ব্যাপারে আতিক হাসান সুমন বলেন, আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হুমকির শিকার হয়েছি।
ফাহিম হোসেন রিজু বলেন, আমি সত্যতা যাছাই-বাছাই করে নিউজ করেছি।
মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি আগে ভুক্তভোগীর ভিডিও ধারণ করি পরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলি সবাই দুর্নীতির কথা বলে। এই জন্য আমি নিউজ প্রকাশ করেছি।
এই হুমকি শুধু মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত নয়, বরং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ওপর সরাসরি আঘাত। আমি আমার পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। আমি আশা করি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনবে।
এ ঘটনায় উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন।
ঘোড়াঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক তিস্তা পত্রিকার প্রতিনিধি আব্দুল গাফফার প্রধান ও প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের সময়ের প্রতিনিধি সেলিম রেজা বলেন, প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে কারো আপত্তি থাকলে সে বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রতিবাদ করার সুযোগ আছে। সে সুযোগ কাজে না লাগিয়ে গণমাধ্যমকর্মীকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া অপরাধ। সুমন,ফাহিম এবং মোফাজ্জল ভাইকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
Leave a Reply