ইঞ্জি. মোঃ আল-আমীন চৌধুরী ( ঢাকা সিটি প্রতিনিধি )
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সমগ্র বাংলাদেশি জনগণের প্রতি এক শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। এই বার্তা প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা, বিতর্ক এবং কূটনৈতিক বিশ্লেষণ।
বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে নিয়ে ভ্রান্ত তথ্য ছড়িয়ে আসা ভারত এবং নরেন্দ্র মোদির জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা। ভারত সরকার বরাবরই বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাববলয়ের মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ট্রাম্পের এই বার্তা কি সেই প্রচেষ্টার ব্যর্থতারই ইঙ্গিত দিচ্ছে?
ট্রাম্পের শুভেচ্ছা বার্তায় কী ছিল?
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ট্রাম্প তার শুভেচ্ছাবার্তায় বলেন:
> “আমেরিকার জনগণের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে—অর্থাৎ ড. ইউনূস এবং বাংলাদেশের জনগণকে—স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই রূপান্তরের সময় বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির সক্ষমতা গড়ে তোলার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
শুধু শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যেই তিনি থেমে থাকেননি, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক, দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধি নিয়েও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরও বলেন:
> “আগামী গুরুত্বপূর্ণ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমরা দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এগিয়ে নিতে পারব এবং একইসঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পারব। পাশাপাশি, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতেও একসঙ্গে কাজ করতে পারব।”
ভারত কি তাহলে ব্যর্থ?
ট্রাম্পের এই বার্তা অনেক কিছুই স্পষ্ট করছে। ভারতের মোদি সরকার বহু বছর ধরে বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাববলয়ে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। এমনকি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পর তাকে ফেরাতে ভারত উঠেপড়ে লাগে। তারই অংশ হিসেবে ভারতীয় সরকার ট্রাম্পকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভুল ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বার্তা থেকে এটা স্পষ্ট যে, তিনি ভারত বা হাসিনার কোনো প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাস করেননি। বরং, তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথেই কাজ করতে আগ্রহী।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, ভারতের মোদি ও হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া হলো:
তাসনিম জারা নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন:
> “বেচারা ভারত আর আমাদের হাসু আফার অবস্থা একই। এত চেষ্টা করলো ট্রাম্পকে বুঝিয়ে বাংলাদেশে ফেরার, কিন্তু তা আর হলো না। ট্রাম্প তো ড. ইউনূস সরকারেই খুশি, মোদির হাসিনাকে লাগলেও ট্রাম্পের লাগবে না।”
ফারিয়া রহমান লিখেছেন:
> “ভারতের মোদি আর হাসিনা দুজনেই ব্যর্থ। এত এত প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে লাভ কী হলো? ট্রাম্প ঠিকই সত্যটা বুঝতে পারছে। এবার নাটক থামিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চান!”
ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট: হাসিনা-মোদির প্রোপাগান্ডা ব্যর্থ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুভেচ্ছা বার্তা প্রমাণ করে যে, ভারত ও হাসিনার দীর্ঘদিনের প্রোপাগান্ডা আর কাজে আসছে না। ট্রাম্প সরাসরি ড. ইউনূসের সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে নতুনভাবে দেখছে।
এটি বাংলাদেশের জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয় হতে পারে, কারণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। অপরদিকে, এটি ভারত ও হাসিনার জন্য একটি বড় পরাজয়, কারণ তাদের রাজনৈতিক কৌশল আর কার্যকর থাকছে না।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ট্রাম্পের এই বার্তা নতুন আশার সঞ্চার করছে। এখন দেখার বিষয়, ভারত ও হাসিনা এই বাস্তবতা কীভাবে গ্রহণ করে!
Leave a Reply