1. mh01610093622@gmail.com : dainikdakshineroporadh :
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:

সেই স্মৃতিময় ঈদ’

  • আপডেটের সময় : সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫
  • ২৩ বার ভিউ

ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আল-আমীন চৌধুরী

মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম পালনের পর শান্তি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। মুসলিম বিশ্বের কাছে এই দিনটি গুরুত্ব অসীম। সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব নিয়ে ধনী- গরীব সবাই এক কাতারে সৃষ্টিকর্তার দরবারে হাজির হয়। দিনটি মুসলমানদের জন্য বরকতময়ও। এই ঈদের প্রবর্তক হচ্ছেন মানবতার মুক্তির দূত হযরত মোহাম্মদ (সা.)। হিজরি দ্বিতীয় সন থেকে মুসলমানেরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করে আসছেন।

হাদিসে আছে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জাতিরই উৎসবের দিন আছে। আর আমাদের উৎসব হলো ঈদুল ফিতর।’ এই ঈদকে ঘিরে রয়েছে ব্যক্তি বিশেষ নানান জীবন্ত স্মৃতি। যা আমাদের স্মৃতির আঙ্গিনায় বেঁচে রয় আজন্ম। বিশেষ করে, রোজার শেষ দশ দিনে এই স্মৃতিগুলো আমাদের ফিরিয়ে নেয় সেই সোনালী ও স্মৃতি গাঁথা দিনগুলোতে। ঈদ কার্ড, ঈদের চাঁদ দেখা, ঈদের প্রস্তুতি, ঈদের সালামি, ঈদ যাত্রা, সবকিছুই যেন এখন সময়ের ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সেই চিরচেনা অমলিন সোনালী শৈশবে কাটানোর ঈদ উৎযাপন। খুব ছোটবেলায় বইতে পড়েছিলাম- ‘আজ ঈদ। দলে দলে লোকজন ঈদগাহে চলিল।’ কি যে খুশির দোলা দিয়ে যেত এই দুটো লাইন। আজও কথাগুলো মনের কোনে গেঁথে আছে। ঈদ এলেই আগে লাইন দুটো ভীষণ মনে পড়ে। সময় বদলেছে, সেই ঈদের আমেজ এখন আর নেই। তবু এখনো চোখের কোনে সেই খুশি মনের মধ্যে ঝিলিক দিয়ে যায়। ঈদ কার্ড বিতরণ ছোটবেলায় এক বিশাল আনন্দের উপলক্ষ ছিল। কেউ কেউ দোকান থেকে রেডিমেড ঈদ কার্ড কিনে নিয়ে আসতো আবার বেশি বা হাতে নানান নকশায় ঈদ কার্ড তৈরি করে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন এর মাঝে বিতরণ করতো। চাঁদ দেখার মুহুর্ত ছিলো আরো রঙিন ও স্মৃতিময়। বিশেষ করে, গ্রামের দিকে এই আনন্দের মাত্রা ছিলো মনে রাখার মতো। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য ছোট্ট ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে মুরুব্বি পর্যন্ত সবাই মাগরিবের পর তাকিয়ে থাকে পশ্চিমাকাশে। চাঁদের বাঁকা রেখা ফুটে ওঠা মাত্র‌ই সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের ফল্গুধারা।

চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করে এই আনন্দ-উত্তেজনা আজকের নতুন নয়, বরং বহু পুরোনো রীতি। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে, মীর্জা নাথান রচিত বিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ ‘বাহারিস্তান-ই গায়বী’তে পাওয়া যায় এই রীতির কথা। সেখানে উল্লেখ আছে: ‘দিনের শেষে সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে রাজকীয় নাকারা বেজে ওঠে এবং গোলন্দাজ সেনাদলের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ক্রমাগত তোপ দাগানো হয়।’ অর্থাৎ, সেনাদলের বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে নগরবাসীকে বুঝিয়ে দেওয়া হতো, শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেছে, আগামীকাল ঈদ। ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে বিশেষ তোড়জোড়। ঈদে নতুন নতুন পোশাক থেকে শুরু থেকে খাওয়া দাওয়ার প্লানিং নিয়ে থাকে নতুনত্ব। চাঁদ রাত পর্যন্ত নতুন পোশাক লুকিয়ে রাখার সে কী আনন্দ! কেউ দেখলে ঈদ শেষ! এখন এসব দেখা যায় না। এখন ঈদের আগেই ট্রায়াল নামক নিয়মের মধ্যে দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ছবিও পোস্ট হয়ে যায়। সবকিছু কেমন যেন পানসে হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে সোনালী শৈশব। আমার বয়স ১২ কিংবা ১৩ হবে। তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। ঈদের বাকি আনুমানিক আট কিংবা দশ দিন। বাজারে ঈদের কেনাকাটার তোরজোর। আব্বু আমার জন্য একটা এক কালারের নিল শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট নিয়ে আসলেন রাতের দিকে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, সে কী আনন্দ! আম্মুর জন্য নতুন পোশাক নিয়ে আসছেন। আব্বু নিজের জন্য কিছুই কিনেননি। বাবারা এমনই হয়। কেউ না দেখার আগেই আমি নিল রঙের শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট লুকিয়ে রাখি। বাড়ির কাজিন রা অনেক জোরাজোরি করলেও তাদের দেখাই নি ঈদ শেষ হয়ে যাবে বলে! এভাবে দিন যায়। ঈদের বাকি একদিন। চাঁদ রাতে শার্ট, প্যান্ট আলমারি থেকে নিয়ে বালিশের নিচে রাখি। ঈদের দিন সকালে দেখি শার্টে ভাজ পরে গেছে।

দেখতে খুবই বাজে লাগছে। সে কী কান্নাকাটি! বাসায় আয়রন মেশিন ছিলো না। তখন হঠাৎ মাথায় আসলো স্টিলের পাত্রে জলন্ত কয়লা নিয়ে কিছু একটা করা যাবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। মোটামুটি ঠিক হল।” প্রতিটা ঈদের এরকম বহু গল্প জড়িয়ে আছে। এসব চিত্র এখনকার জেনারেশনের মধ্যে দেখা যায় না। অতি আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষের গহ্বরে হারিয়ে সোনালী শৈশবের ঐতিহ্য।

এখনো ঈদ আসে। এখন আর নতুন পোশাকের প্রতি আগ্রহ নাই। তবুও কেনাকাটা হয়। কিন্তু সেই আগের মতো আনন্দটা আর নেই।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি
Desing & Developed BY ThemeNeed.com