মেহেদী হাসান হৃদয়,,
বৃক্ষনিধন, পাহাড় কাটা ও অবৈধ দখলের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বনাঞ্চল। অভিযোগ উঠেছে, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা, যাদের ‘বনের রাজা’ বলা হয়, তারা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে অবৈধ লেনদেন ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসে মদত দিচ্ছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, কক্সবাজারের মহেশখালী ও চকরিয়া—এসব অঞ্চলে সংরক্ষিত বনভূমি ক্রমশ উজাড় হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে পাহাড় কেটে প্লট তৈরি, অবৈধ বসতি নির্মাণ এবং গাছ কেটে কাঠ পাচার অব্যাহত রয়েছে। এসব অপকর্মের ফলে ভূমিধস, নদীভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
স্থানীয় পরিবেশবিদদের মতে, “অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন বিভাগ ও প্রশাসনের নীরব সমর্থনেই পাহাড় ও বন নিধনের মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।”
গোপন সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে এক ধরনের সিন্ডিকেট সক্রিয়, যারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে সরকারি বনভূমি দখল, কাঠ পাচার ও পাহাড় কাটা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড থেকে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু প্রভাবশালী মহল।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক দশকে চট্টগ্রামের বনাঞ্চলের ৩০ শতাংশেরও বেশি এলাকা উজাড় হয়ে গেছে। বিশেষ করে ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বান্দরবানের রুমা, থানচি, আলীকদম অঞ্চলে বনের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।
পরিবেশ আন্দোলনকারীরা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। চট্টগ্রামের এক পরিবেশ সংগঠনের নেতা বলেন, “বনের এই বিপর্যয় রোধে সরকারি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত জরুরি। বন বিভাগের দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”
এ বিষয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে বাস্তবে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের বনভূমি রক্ষা করতে হলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, পাহাড় কাটা ও বন উজাড় বন্ধে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যথায়, অদূর ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র চরম সংকটে পড়বে।
Leave a Reply