বাহাদুর চৌধুরী,,
ভোলার দৌলতখান উপজেলার নুরু মিয়ার হাট দক্ষিণ জয়নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত রহিমা খাতুন দাখিল মাদ্রাসা ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৪ সালে ভোলা জেলা প্রশাসকের শিক্ষা বিভাগে নথিভুক্ত হয়। ২০২২ সালে এটি সরকার স্বীকৃত মাদ্রাসার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
স্থানীয়দের দাবি, মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নুরুল আমিন ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নাজিমউদ্দীন শিপন (ভাতিজা কালো মানিক) মেম্বার একযোগে নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েও নাজিমউদ্দীন শিপন (ভাতিজা কালো মানিক) মেম্বার নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিত থাকেন না। মাসে মাত্র এক-দুই দিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই তিনি বেতন উত্তোলন করেন। প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
শিক্ষক হাজিরা খাতার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৮ জুন নাজিমউদ্দীন শিপন (ভাতিজা কালো মানিক) মেম্বার সর্বশেষ মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি আর উপস্থিত না থাকলেও নিয়মিত বেতন গ্রহণ করেছেন, যা অন্য শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক ও শিপন মেম্বার যৌথভাবে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে মাদ্রাসায় শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, চাকরি দেওয়ার নামে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলেও পরে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে ভয়ভীতি দেখানো হয়, যদিও কয়েকজন সীমিত পরিমাণ টাকা ফেরত পেয়েছেন।
শিক্ষক কালিমুল্লা, আব্দুল কাদের, জসিম ও শফিকুল ইসলাম আদালতে ন্যায়বিচারের আশায় অভিযোগ করলেও নাজিমউদ্দীন শিপন (ভাতিজা কালো মানিক) মেম্বারের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কাঙ্ক্ষিত সুরাহা পাননি।
এছাড়া স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে শিপন মেম্বার ক্ষমতায় থেকে সরকার থেকে প্রাপ্ত বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও অন্যান্য অনুদানের অর্থ সাধারণ মানুষের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছাতে দেননি। বিনা টাকায় কেউ সরকারি সুযোগ-সুবিধা চাইলে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হতো অথবা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হতো।
স্থানীয়রা আরও জানান, নাজিমউদ্দীন শিপন (ভাতিজা কালো মানিক) মেম্বার ক্ষমতায় থাকাকালীন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন, যারা তার বিরোধীদের ওপর নির্যাতন চালাত।
অর্থনৈতিকভাবে একসময় অসচ্ছল থাকলেও বর্তমানে নাজিমউদ্দীন শিপন (ভাতিজা কালো মানিক) মেম্বার ভোলা শহরে বিলাসবহুল বাড়ি, গাজীপুরের চৌরাস্তায় বহুতল ভবন, বাজারে একাধিক দোকানসহ শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্থানীয়দের মতে, তদন্ত করলে তার সম্পদের উৎস নিয়ে অসংখ্য অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসবে।
সরকার পরিবর্তনের পর থেকে নাজিমউদ্দীন শিপন (ভাতিজা কালো মানিক) মেম্বার আত্মগোপনে আছেন। একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তরা দুর্নীতি তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, সঠিক তদন্ত ও শাস্তির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
প্রথম পর্ব,,,
দ্বিতীয় পর্ব চলমান।
Leave a Reply