সম্পাদকীয় ✍️
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জনগণ এবং জনগনের সংস্কার আকাঙ্ক্ষা জিম্মি হয়ে গেছে। যেন রাজনৈতিক দলগুলো চাইলেই কেবল সংস্কার হবে, তারা না চাইলে সংস্কার হবে না। তারা যতোটুকু সংস্কার চাইবে ততটুকুই সংস্কার হবে। তারা যেখানে সংস্কার চাইবে না সেটি যদি জনগণের জন্য মঙ্গলজনকও হয় তবুও সেই সংস্কারটি কার্যকর হওয়ার জো নেই।
এখানে জন আকাঙ্ক্ষা, জনগণের চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য নাই।
রাজনৈতিক দলগুলো হলো ম্যানেজমেন্ট টিমের মত যে টিমের প্রধান ভাবনা হলো জনজীবনে কিভাবে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেওয়া যায়। সরকারি সেবাগুলোকে কিভাবে আরো উন্নত করা যায়। জনগণের ট্যাক্সের টাকা কিভাবে আরো সুষমভাবে জনগণের কল্যাণে জনগণের মাঝেই বন্টন করে দেওয়া যায়। সীমিত সম্পদকে ব্যবহার করে কিভাবে জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা যায় এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করা যায়। এসব বিষয়ে নীতি নির্ধারণ বা পলিসি মেকিং করাই হলো রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ।
রাজনীতির প্রতিযোগিতা হলো কে কত পলিসি মেকিং এ দক্ষ তার প্রতিযোগিতা। নির্বাচনের উদ্দেশ্য হলো জনগণ যেন সবচাইতে ভালো পলিসি মেকারদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারে।
অথচ এই তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলো বলে তিনশ চারশ পৃষ্ঠার সংস্কার রিপোর্ট পড়ার সময় তাদের নাই।
যারা সংস্কার রিপোর্ট পড়ার সময় পায়না তারা দেশকে সেবা দেওয়ার সময় কিভাবে পাবে? তাদের সব সময় তো বরাদ্দ থাকে গুন্ডামি, সন্ত্রাস, লুণ্ঠন, দুর্নীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য। জনগণের জন্য, জনস্বার্থে নীতি নির্ধারণের জন্য তারা যে রাজনীতি করে না সেটি তাদের কথায় খুব নগ্নভাবে ফুটে ওঠে।
জনগণের সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে পা দিয়ে ডলে পিষে হলেও, প্রয়োজনে মব জাস্টিস করে হলেও, রাজপথের তাণ্ডব সহিংসতা করে হলেও তাদের ক্ষমতা চাই চাই।
যারা নির্বাচন চায় এরা কাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবে বলে ঠিক করেছে দেশবাসীর খুব জানতে মন চায়।
এরা কি টাকার বিনিময়ে আবারো কালো টাকার মালিকদের কাছে এমপি নমিনেশন বিক্রি করবে? তারা কি আরো একবার কালো টাকা ছিটিয়ে অসচেতন ভোটারদের ভোট কিনবে? তারা কি হুমকি-ধামকি মৃত্যুভয় দেখিয়ে নিরীহ ভোটারদের ভোট এবং তাদের ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে আরো একবার কেড়ে নিবে? তারা কি সেই সমস্ত প্রার্থীদের নমিনেশন দিবে যারা ভোটের আগে কিছু মিথ্যা দায়সারা প্রতিশ্রুতি দিবে আর নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য কোন দায়বদ্ধতা, কোন তাগিদ তারা অনুভব করে না- কারণ তারা জানে তাদের কখনো জনগণের নিকট জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হয়না, তাদের দুর্নীতি নিয়ে তাদের প্রশ্ন করা যায় না, তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব স্বচ্ছ এবং উন্মুক্ত পদ্ধতিতে পালনের জন্য বাধ্য করা যায় না।
এরা কি সেই সমস্ত ব্যক্তিদেরকেই আবার এমপি বানাবে যারা এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য প্রতিপক্ষকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে লাশ গুম করতে দ্বিধা করবে না।
বাংলাদেশের রাজনীতির দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। গ্রাম, মফস্বল, জেলা, উপজেলা এদেশের সবখানে এলাকার সবচাইতে বড় সন্ত্রাসী, সবচাইতে বড় কুলাঙ্গার, সবচাইতে উগ্র সহিংস মানুষ যারা তারা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
এদেশের রাজনীতি শুধু এসব সন্ত্রাসীদের জন্য উন্মুক্ত যাদের কারনে বাকি জনগণের কাছে রাজনীতি হয়ে যায় ঘৃণার পাত্র।
যারা নির্বাচন চায় তারা কি রাজনীতির এই বদ্ধ দুয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত করতে পারবে? তার কি সৎ নিরীহ দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন করতে পারবে- যারা জনগণের কল্যাণে জনগণের পলিসি মেকার হতে চায়, যারা প্রতিপক্ষের সমালোচনাকে নিজেদের সংশোধনের নিমিত্তে ইতিবাচক ভাবে নিতে পারবে। যারা মানুষ হত্যার রাজনীতি করবে না। যারা নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিকে তার জীবনের সবচাইতে বড় দায় হিসাবে বিবেচনা করবে। যারা দায়িত্ব পালনের ব্যর্থ হলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবে।
যার নির্বাচন করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য যদি হয় রাজনীতির দরজা কিছু সন্ত্রাসী গুন্ডা মাস্তানদের জন্য উন্মুক্ত রেখে টাউট আমলাতন্ত্র এবং ব্যবসায়ী মাফিয়াদের সাথে হাত মিলিয়ে জনগণের সম্পদ, আমানত লুটপাট করার সেই পুরনো সিস্টেমকে টিকিয়ে রাখা তাহলে এই নির্বাচন থেকে জাতির কি প্রাপ্তি অর্জন সম্ভব হবে?
Leave a Reply